পাহাড়ি খাবার

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী পাহাড়িদের খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্যতা যা তাদের সমতলের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের থেকে নিঃসন্দেহে করেছে আলাদা। পাহাড়িদের বৈচিত্র্যময় সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পেতে চায় অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা। কিন্তু তারা জানে না কিভাবে পাহাড়িদের খাবার তৈরি করতে হয়। তাদের জন্যই এই ব্লগ। ব্লগে পড়ুন আর ঘরে বসে পাহাড়ি খাবার তৈরি করুন।

শামুক তরকারি রান্না সাবারাং পাতা দিয়ে - জিভে জল এসে যায়

‘চুকুুচুক’ চুষতে চুষতে কখনো ঠোঁট লাল করে ফেলেছেন? হ্যাঁ, এরকম করে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।

বলছি, সাবারাং পাতা দিয়ে খোলসসহ রান্না করা শামুক তরকারির কথা। চুক চুক করে চুষে চুষে শামুকের শাঁসটা বের করতে হয় বলে চাকমা ভাষায় এই খাবারের নাম চুক/চক শামুক। যারা একবার হলেও খেয়েছেন, একমাত্র তারাই বলতে পারবেন এর অতুলনীয় স্বাদের কথা। চক শামুক তরকারির নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায় তাদের।

আজ জানবো, অনেক তৃপ্তিকর এই খাবারের রান্নার পদ্ধতি।


পাহাড়ি খাবার
শামুক তরকারি

 চক শামুক তরকারি

১) শামুক ধোয়া ও লেজ কাটা

প্রথমে শামুকগুলোকে খোলসসহ ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি হিসেবে লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে নিতে পারেন। এতে করে শামুকগুলো ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর শামুকের লেজের দিকের অংশ খানিকটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা করা হয় যাতে শামুকের মুখ দিয়ে চুষে বাতাসের তীব্র প্রবাহ দ্বারা শামুকের ভেতরের শাঁসটা বের করে আনা যায়। লেজ কাটার পর আরেকবার ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: শিমুল ফুল যেভাবে খাওয়া যায়

                      ঘুমুরো/ঘুঙুরো ভাজা - প্রাণীজগতের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার

২) চাউল বাটা

বাড়িতে চাউল বাটা যদি থাকে ভালো, না থাকলে এক মুঠো চাউল ভিজিয়ে রাখুন আগে থেকে। চাউল নরম হয়ে এলে তা বেটে রাখুন। শামুক তরকারির উপর চাউল বাটার পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

পাহাড়ি খাবার
সাবারাং পাতা গাছ


৩) সাবারাং পাতা/লেমন বেসিল

সাবারাং বা লেমন বেসিল পাহাড়ি খাবারে বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। এটি অনেকটা মসলার মতন কাজ করে। খাবারে অন্যরকম ফ্লেভার আনতে এর জুড়ি নেই। তাই ‍কিছু সাবারাং পাতা বা সাবারাং গাছের কিছু আগা সংগ্রহ করে রাখুন শামুক তরকারির জন্য।

৪) আদা-রসুন-মরিচ-পেঁয়াজ বাটা

অল্প পরিমাণ আদা, কয়েক খোয়া রসুন, একটি পেঁয়াজ ও পরিমাণমত মরিচ বেটে পেস্ট করে রাখুন। এখানে উল্লেখযোগ্য, পাহাড়িরা ঝালপ্রিয় হওয়ায় তারা ছোট ঝাল মরিচ (সুচ মরিচ/জুম্ম মরিচ) বেশি ব্যবহার করে থাকে। পাহাড়িদের মতন স্বাদ পেতে চাইলে আপনিও সুচ মরিচ ব্যবহার করুন। খেয়ে ঠোঁট লাল না হলে কি আর চক শামুক তরকারি খাওয়া!

আরও পড়ুন: শামুক চাষ হতে পারে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর একটি বড় পথ

৫) সিদল ছাঁকা পানি

পরিমাণমত সিদল/চিদল পানিতে মিক্স করে ছেঁকে নিন।
যারা সিদল খান না, তারা শুধুমাত্র পানিটা ব্যবহার করতে পারবেন।

পাহাড়ি খাবার
শামুক তরকারি


রান্না পদ্ধতি

১) চুলায় পাত্র দিয়ে শুকিয়ে নিন। 
২) তেল দিন।
৩) আদা-রসুন-পেঁয়াজ-মরিচ বাটার পেস্টটি কিছুক্ষণ ভাজিয়ে নিন। পরিমাণমত হলুদ ও লবণ দিয়ে দিন।
৪) শামুকগুলো দিন। চামচ দিয়ে নেড়ে পেস্টের সাথে মিক্স করে নিন যাতে শামুকের খোলসের ভেতরে পেস্টগুলো ঢুকে যায়। এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ২-৩ মিনিট রেখে দিন ঝোল না শুকানো পর্যন্ত।
৫) ঝোল শুকিয়ে এলে সিদল ছাঁকা পানি বা শুধুমাত্র পানি দিন যতটা ঝোল আপনি পছন্দ করেন। সঙ্গে লবণের টেস্টটা খেয়াল রাখবেন নোনতা বা পানসা হচ্ছে কিনা। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করতে থাকুন।
৬) ১০-১৫ মিনিট রান্না করার পর চাউল বাটা বা চালের গুড়া দিন। এবং কিছুক্ষণ রেখে দিন যতক্ষণ না ঝোলটা ঘন হয়ে আসে।
৭) এরপর সাবারাং পাতা দিয়ে দিন। সাবারাং পাতা দেয়ার পর অল্প কিছুক্ষণ রেখে পাত্রটি নামিয়ে নিন। এবার গন্ধটি পেয়ে আপনার জিভে জল এসে যাবার উপক্রম হবে।


ব্লগে লেখা পাঠাতে চাইলে Contact Us পেইজের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন।

No comments:

Post a Comment

লেখা পাঠান

Name

Email *

Message *