পাহাড়ি খাবার

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী পাহাড়িদের খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্যতা যা তাদের সমতলের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের থেকে নিঃসন্দেহে করেছে আলাদা। পাহাড়িদের বৈচিত্র্যময় সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পেতে চায় অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা। কিন্তু তারা জানে না কিভাবে পাহাড়িদের খাবার তৈরি করতে হয়। তাদের জন্যই এই ব্লগ। ব্লগে পড়ুন আর ঘরে বসে পাহাড়ি খাবার তৈরি করুন।

পাজন : ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার রেসিপি - পাহাড়ি খাবার

পাজন, পাঁচন, পাহাড়ি খাবার, পাজন রেসিপি
পাজন তরকারি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী পাহাড়িদের উৎসবের প্রাণ পাজন (পাচন)। পাজন ছাড়া বৈসু, বিজু, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু এককথায় বৈসাবি উৎসবটাই অর্থহীন। তাই পাহাড়িদের কাছে পাজন মানেই উৎসবের আমেজ। আনন্দের হিল্লোল।

পাজনের শুরুটা কখন, কোথায়, কীভাবে হয়েছিল তা আজ আর কারোর জানা নেই। তবে ধারণা করা হয় হাজার বছরের ঐতিহ্যের চলমান এক সংস্কৃতির অংশ এই পাজন। বিশেষ করে আগেকার পাহাড়িরা যখন জুম চাষের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল। 

জুমে উৎপাদিত সব ধরণের সবজির সমন্বয়ে মিক্সচার করে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেয়া হয়েছে পাজন। বৈসাবি উৎসবের দিন পাহাড়িদের প্রত্যেক ঘরে ঘরে পাজন রান্না করা হয়। এবং তা দ্বারা অতিথিদের আপ্যায়ণ করা হয়। বলা হয়ে থাকে, পরিপূর্ণ পাজন (পাঁচন) তরকারি রান্নার জন্য ১০৮ প্রকার সবজির প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমানে ২৫-৩০ প্রকার সবজি দিয়েই বেশিরভাগ পাজন তৈরি করা হয়। অনেক ধরণের ঔষধিগুণসম্পন্ন সবজি ও ফলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় বলে পাজন শরীরের জন্য বেশ উপকারি হয়। উৎসব ছাড়াও ঘরোয়াভাবে পাচন রান্না করে খেয়ে থাকে অনেকে।

আরও পড়ুন: শামুক তরকারি রান্না সাবারাং পাতা দিয়ে - জিভে জল এসে যায়

পাজন তরকারির উপকরণ

হাতের নাগালে যত প্রকারের সবজি পাওয়া যায় সবই পাজন রান্নায় দেয়া যায়। তবে পাজনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ধরা হয় কাঁঠালকে। দ্বিতীয় উপকরণ তারা সবজি এবং তৃতীয় হাত্তোল ঢিঙি আগা (কাঁঠাল ঢেঁকি আগা - এক প্রকার সবজি)। এছাড়া অন্যান্য কমন সবজির মধ্যে আছে আলু, পেঁপেঁ, শসা, লাউ, বাঁশ কোড়ল, মিষ্টি কুমড়া, মূলা শুকনা, শিমুল ফুল শুকনা, ফুলকপি, বাধাকপি, সীম, বেগুন, ঢেঁকি শাক, বরবটি ইত্যাদি। পাজনের স্বাদ বৃদ্ধি করতে এতে শুটকি ও শুকনা হাঙর মাছও ব্যবহার করা হয়।

পাজন, পাচন, পাহাড়ি খাবার, পাজন রেসিপি
অনেক ধরণের সবজির সমন্বয়ে তৈরি পাজন

মশলা হিসেবে সাধারণ তরকারিতে যা ব্যবহার করা হয়। যেমন- পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, কাঁচা মরিচ বাটা, জিরা গুড়া, তেল, লবণ ও হলুদ গুড়া। এছাড়া তরকারিতে লাল রঙ আনার জন্য লাল মরিচের বাটাও ব্যবহার করা হয়।

রান্না প্রণালী

সব সবজিগুলো সাইজ অনুযায়ী কেটে ভালোমতো ধুয়ে নিতে হবে। শুকনা সবজি ও কাঁঠাল কুচি কাটা আগেই সিদ্ধ করে নিতে হবে যাতে নরম হয়। 

পাত্রে তেল গরম করে তাতে মসলা জাতীয় উপকরণগুলো (পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, লবণ, হলুদ) মিক্স করে ভেজে নিতে হবে। মসলা পেস্টে হালকা পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ২-৩ মিনিট রেখে দিতে হবে।

এরপর শুটকিসহ শক্ত ও শুকনো জাতীয় সবজি যেমন- আলু, কাঁঠাল ইত্যাদি আগে দিয়ে দিতে হবে। এগুলো সিদ্ধ হতে একটু সময় লাগে। ৫ মিনিট পর অন্যান্য সব সবজিগুলো দিয়ে চামচ দিয়ে ভালোভাবে নাড়িয়ে দিতে হবে যাতে মসলা ভাজার সাথে সব সবজি মিক্সড হয়ে যায়। এরপর ২-৩ মিনিট রেখে সিদল ছাঁকা পানি (যারা সিদল খান না তারা শুধুমাত্র পানি ও বেশি পরিমাণে শুটকি ব্যবহার করবেন) দিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন, পাজন তরকারিতে যত বেশি প্রকার শুটকি (ছুরি শুটকি, চিংড়ি শুটকি) ব্যবহার করবেন তত তরকারির স্বাদ ভালো হবে।

এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। 

পাহড়ি খাবার ব্লগে দারুণ দারুণ সব খাবার রেসিপি লিখে পাঠাতে Contact Us পেইজ ব্যবহার করুন।

পাহাড়ি খাবার ব্লগে প্রকাশিত কোনো লেখা হুবহু কপি ও তা প্রকাশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ রইল।

No comments:

Post a Comment

লেখা পাঠান

Name

Email *

Message *