থানকুনি পাতার সালাদ |
বাড়ির আশেপাশে, পুকুর পাড়ে, জমির আইলে কিংবা জলাশয়ের পাশে প্রায় সবখানে চোখে পড়ে থানকুনি পাতা। এটি খাবার হিসেবে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি বেশ ঔষধিগুণসম্পন্নও। পেটের অসুখ ও আমশয়ে এর বেশ ব্যবহার আছে। এর মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মুখে ঘা, ক্ষত, ব্রণ, সর্দি ও গলা ব্যাথায় থানকুনি পাতা বেশ উপকারি।
থানকুনি পাতা |
থানকুনি পাতা প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো নির্ভেজাল এক খাদ্য। ইংরেজিতে একে Indian Pennywort বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Centella Aciatica। চাকমারা একে মিনগুনি বা মিনমিনি এবং মারমারা ম্রাংখোয়া বলে থাকে।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ভেষজ হিসেবে থানকুনি পাতা বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউগিনিতে থানকুনি পাতা পাওয়া যায়।
পাহাড়ি স্টাইলে থানকুনি পাতার সালাদ
যা যা প্রয়োজন
১। থানকুনি পাতা (পরিমাণমত, ১-২ জনের জন্য ৫০ গ্রামই যথেষ্ট)
২। ছুড়ি শুটকি বা ড্রাই ফিশ ৩ টা ( শুটকি যদি বড় সাইজের হয় তবে ২ টা নিলেই হবে)
৩। পেঁয়াজ কুচি কাটা ১টা
৪। সুচ মরিচ বাটা (পাহাড়িরা ঝাল বেশি হওয়ার জন্য ছোট সাইজের এই মরিচটা বেশি খেয়ে থাকে)
৫। টমেটো ২ টা
৬। শসা ১ টা
৭। লবন (পরিমাণ মত)
৮। সরিষা তেল ১-২ টেবিল চামচ
৯। নাপ্পি বা সিদল পোড়া সামান্য পরিমাণে (এটা না দিলেও চলবে। কারণ শুটকি দেয়ার কারণে এটির আসলে তেমন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পাহাড়ি স্টাইল বলে কথা। সিদল না দিলে কি হয়! 😂😂😂
আরও দেখতে পারেন: পাজন : ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার রেসিপি
সালাদ বানানোর পদ্ধতি
প্রথমে থানকুনি পাতার গোড়ার শিকড় ও ফুলের অংশগুলো ভালোভাবে কেটে ফেলে দিন। এরপর একটা পাত্রে বা প্লাস্টিকের ঝুড়িতে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ধোঁয়ার পর আধা কুচি করে কেটে একটি পরিষ্কার পাত্রে তুলে রাখুন।
শুঁটকি মাছ ও সিদল/নাপ্পী আগুনে পুড়িয়ে নিন। আগুনে পোড়ানো হয়ে গেলে শুটকিগুলো পরিষ্কার করে নিন। চাইলে পানিতে ধুয়েও পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এরপর শুটকি গুলো ছোট ছোট সাইজ করে ছিঁড়ে নিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিন।
আসল পাহাড়ি স্টাইলটা হলো মরিচ বাটার সাথে নাপ্পী পোড়া বেটে নেয়া। এটা আলাদা একটা স্বাদ আনে। এরপর পেঁয়াজ কুচি কাটা ও শুটকি টুকরোগুলো একসাথে হালকা করে বেটে নেয়া।
যারা সিদল বা নাপ্পী খান না তারা মরিচ বাটার সাথে শুধুমাত্র পেঁয়াজ কুচি কাটা ও শুটকি টুকরোগুলো মিক্স বা বেটে নিন।
এরপর পাকা টমেটোগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে ফেলুন। এবং শসাও একই ভাবে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
যারা সুচ মরিচ খান না বা যাদের কাছে হাতের নাগালে সুচ মরিচ নাই তারা অন্য কাঁচা মরিচ নিন। মরিচ গুলো লম্বা করে মাঝখানে কেটে বা কুচি কুচি করে কেটে রেখে দিন। মরিচ বাটা না করতে চাইলে এভাবে মরিচ কুচি করে কেটে দিতে পারেন।
এবার একটি পাত্রে থানকুনি পাতা, টমেটো কুচি, মরিচ বাটা/মরিচ কুচি, শসা কুচি, শুঁটকি মাছ, পেঁয়াজ কুচি, লবণ সব একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ তৈরির কাজটা হাত দিয়ে করলে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করা যায়। স্বাদটাও আলাদা হয়। যদি হাত দিয়ে করতে না চান তবে চামচ দিয়েও করতে পারেন।
মিশ্রণ ভালোভাবে তৈরি করার পর এবার ১ চামচ সরিষার তেল ঢেলে দিন। আবারও হাত দিয়ে বা চামচ দিয়ে আরেকবার মিশ্রন করে ফেলুন। এবার গ্রাস গ্রাস ভাতের সাথে মিশিয়ে গপাগপ গপাগপ খেতে থাকুন থানকুনি পাতার সালাদ। 😃😃
আপনারা যদি বাড়িতে এটি ট্রাই করেন তবে থানকুনি পাতার সালাদ কেমন লাগলো তা অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভূলবেন না।
নিত্য-নতুন পাহাড়ি খাবার সম্পর্কে জানতে ও বাড়িতে পাহাড়ি খাবারের টেস্ট
নিতে চাইলে পাহাড়ি খাবার ব্লগের সঙ্গেই থাকুন।
No comments:
Post a Comment