বসন্তকে বাড়তি রঙে রাঙাতেই যেন শিমুল ফুলের আগমণ। শিমুলের রক্তিমাভা রঙ বসন্তকে করে রঙিনময়। সকালে ঘুম ভাঙে শিমুল গাছে জড়ো হওয়া একঝাঁক পাখির কিচির-মিচির শব্দে। তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায় মনের সুখে। আর তাদেরই এই উড়াউড়ি ঘুরাঘুরিতে টুপটাপ টুপটাপ ঝরতে থাকে শিমুল ফুল। গাছের গোড়া থেকে ৪০-৫০ ফুট দূর পর্যন্ত লাল হয়ে থাকে ঝরা ফুলগুলোর রঙে, যেন প্রকৃতি নিজে থেকেই সাজিয়ে রাখে এক একটা ফুলশয্যা।
প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খাবার হিসেবেও দারুণ এই শিমুল ফুল। এটিকে টাটকা রান্না করেও খাওয়া যায় আবার শুকিয়ে পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করেও রাখা যায়। এবার জানবো শিমুল ফুলের কোন কোন অংশ খাওয়া যায়।
শিমুল ফুলের কোন কোন অংশ খাওয়া যায়?
মূলত শিমুল ফুলের লাল লাল পাপড়িগুলো বাদে সব ফুলটাই খাওয়া যায়। ফুলের সবুজ পাপড়িগুলো যা ফুলটির হেড(টুপি) নামে পরিচিত, এবং ফুলের মাঝের অংশ খাওয়া যায়। ফুলের এই অংশগুলো টাটকা বা শুকনো খাওয়া হয়। শুকিয়ে সংরক্ষণ করাও খুব সহজ। মাত্র ২-৩ দিন রোদে শুকালেই সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে ওঠে।
টাটকা বা শুকনো যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন ফুলগুলোকে আগে ভালোমতো সিদ্ধ করে নিতে হবে। তবে শুকনো ফুল হলে সিদ্ধ করার আগেও কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে নরম হওয়ার জন্যে।
এরপর টাটকা ফুল হলে শুধুমাত্র ভাজি করে খাওয়া যায়। আর শুকনো হলে ভাজি বা ভর্তা করে খাওয়া যায়।
রেসিপি-১: শিমুল ফুল ভাজি
টাটকা বা শুকনো উভয় ফুল সিদ্ধ করে নেওয়ার পর পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এর ফাঁকে মরিচ বাটা, পেঁয়াজ কুচি এবং অন্যান্য মসলা পরিমাণমত লবণ-হলুদ মিশিয়ে তেলে ভেজে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পাহাড়িরা সিদোল(নাপ্পী) পুড়িয়ে মরিচ বাটা'র সাথে পেস্ট তৈরি করে। যারা সিদোল খান না তারা কয়েক খোয়া রসুন বেটে দিতে পারেন।
এরপরে ভেজে রাখা মসলার পেস্টে শিমুল ফুল দিয়ে ভেজে নিলেই হয়ে গেলো শিমুল ফুল ভাজি।
রেসিপি-২: শিমুল ফুল ভর্তা
মূলত শুকনো শিমুল ফুলই ভর্তা করে খাওয়া হয়। প্রথমে শুকনো শিমুল ফুল কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সিদ্ধ করে নেয়ার পর পানি ঝরাতে হবে। এর ফাঁকে মরিচ পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে আগে থেকে পুড়িয়ে নেয়া সিদোলের সাথে বেটে নিতে হব অল্প লবণ দিয়ে। এরপর খাওয়ার আগে মরিচ ও সিদোলের পেস্টের সাথে সিদ্ধ শিমুল ফুল ভালোমতো মিক্স করলেই হয়ে গেলো শিমুল ফুল ভর্তা।
যারা সিদোল(নাপ্পী) খান না, তারা ভর্তায় অল্প পরিমাণ তেল এবং রসুন বাটা ব্যবহার করতে পারেন, তবে সিদোল দিয়ে খাওয়ার অসাধারণ স্বাদটা কখনোই পাবেন না। সিদোল দিয়ে খাওয়ার টেস্টটাই অন্যরকম। তাই যদি শিমুল ফুলে পাহাড়ি খাবারের টেস্ট পেতে চান, অবশ্যই পাহাড়িদের মতো করে খেতে হবে সিদোল পেস্ট দিয়ে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পাহাড়ি খাবার ব্লগে প্রকাশিত সমস্ত লেখাই ব্লগ কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্যদের পাঠানো লেখা প্রকাশিত হলে অবশ্যই লেখকের নাম উল্লেখ থাকে। এবং ব্লগে প্রকাশিত যেকোনো ছবির যথাযোগ্য উৎসের সোর্স দেয়া থাকে। যদি এই ব্লগে প্রকাশিত কোনো লেখা(পাঠানো লেখা) হুবহু আপনার লেখার কপি হয়, তবে অবশ্যই যথার্থ প্রমাণসহ যোগাযোগ করবেন নিম্নোক্ত ঠিকানায়:
কন্টাক্ট: ০১৫১৭৮৩২১১৪
ই-মেইল: paharikhabar@gmail.com
আমরা উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে কপিকৃত লেখা সরাতে সম্মত থাকবো।
আর পাহাড়ি খাবার ব্লগে প্রকাশিত যেকোনো লেখা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। অথবা যথাযোগ্য সোর্স উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।
No comments:
Post a Comment