পাহাড়ি খাবার

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী পাহাড়িদের খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্যতা যা তাদের সমতলের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের থেকে নিঃসন্দেহে করেছে আলাদা। পাহাড়িদের বৈচিত্র্যময় সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পেতে চায় অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা। কিন্তু তারা জানে না কিভাবে পাহাড়িদের খাবার তৈরি করতে হয়। তাদের জন্যই এই ব্লগ। ব্লগে পড়ুন আর ঘরে বসে পাহাড়ি খাবার তৈরি করুন।

ব্যাঙ যেভাবে খাওয়া যায় - পাহাড়ি খাবার রেসিপি

ব্যাঙ তরকারি
রান্না করা ব্যাঙ তরকারি
কোন ব্যাঙগুলো খাবেন?
ব্যাঙ উভচর মেরুদন্ডী প্রাণী। বর্ষাকাল ব্যাঙের প্রজনন সময় হওয়ায় এসময় প্রচুর পরিমাণে ব্যাঙ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ আছে(সূত্র: প্রথম আলো, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮)। কিন্তু সবধরণের ব্যাঙ খাওয়ার উপযোগী নয়। যেমন- কুনোব্যাঙের একধরণের বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

পাহাড়িরা মূলত দুই প্রজাতির ব্যাঙ বেশি খেয়ে থাকে। সেগুলো হলো- কটকটি ব্যাঙ বা ভাসা ব্যাঙ, এবং কোলা ব্যাঙ বা সোনা ব্যাঙ।

ব্যাঙ যেভাবে খাবেন:
মূলত ব্যাঙের রান বা পা বেশি খাওয়া হয়, বিশেষ করে কোলা ব্যাঙ। মেরুদন্ড কম খাওয়াই ভালো। এতে একধরণের এনজাইম থাকে যা বেশি পরিমাণে খাওয়া মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
ব্যাঙ তরকারি
কুটে রাখা ব্যাঙ

ব্যাঙের চামড়া ছিলে মাথা, পায়ের নখ ও নাড়িভূড়ি ফেলে দিতে হবে। তারপর ভালোমতো ধুয়ে ছোট ছোট করে কুটে রান্না করতে হবে।

অপরাপর মাংস যেভাবে রান্না করে খান, ব্যাঙও সেভাবে রান্না করে খেতে হবে। তবে মনে রাখবেন, ব্যাঙ তরকারির ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিমাণে মশলা ও আদা-রসুন বেটে দিতে হবে। এতে ব্যাঙ মাংসের উৎকট গন্ধ দূর হয়ে খাবারে সুগন্ধি ছড়ায়।


বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাঙ সুস্বাদু খাবার হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। যেমন ফ্রান্সে ব্যাঙ পা (Frog Legs) খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।


ব্যাঙ শুধু রান্না করে খাওয়া যায় তা না। ভেজে, কাবাব বানিয়ে বা বেশি পরিমাণে মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়েও খাওয়া যায়। ব্যাঙ ভর্তা পাহাড়িদের কাছে খুব প্রিয় একটা রেসিপি।

পাহাড়ি খাবার রেসিপির আরো পড়তে পারেন: আলু দিয়ে কলার মোচা ভর্তা - পাহাড়ি খাবার
ব্যাঙ তরকারি
মরিচের সাথে ব্যাঙ ভর্তা

ব্যাঙের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বিলুপ্তির হুমকি:
ব্যাঙ শুধু খাবার হিসেবে নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও এর ভূমিকা অতুলনীয়। ফসলি জমির কীটপতঙ্গ খেয়ে ব্যাঙ ফসলকে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে। এতে জমির উর্বরতা বজায় থাকে। ব্যাপক হারে পোকা দমনের জন্য ব্যাঙকে ‘পোকা মারার প্রাকৃতিক যন্ত্র বলা হয়ে থাকে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বর্তমানে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ থাকলেও তাদের মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন প্রায়। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, শিরোনাম: দেশে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ কমে যাচ্ছে)
ব্যাঙের এই বিলুপ্তির জন্য যতটা না খাদ্য হিসেবে ব্যাঙ খাওয়া দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী ব্যাঙের চর্মরোগ। ‘কাইট্রিডিওমাইকোসিস’ নামক এক ধরণের দূরারোগ্য চর্মরোগ ব্যাঙের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। কাইট্রিড নামক এক ধরণের ছত্রাক এই রোগের জন্য দায়ী। এ ছত্রাক ব্যাঙের চামড়ায় হানা দিয়ে ধীরে ধীরে ব্যাঙকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে উভচর প্রাণীর বিলুপ্তির কারণ এই কাইট্রিড ছত্রাক। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

No comments:

Post a Comment

লেখা পাঠান

Name

Email *

Message *